বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK
2

বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (BTTB):

বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড মূলত ল্যান্ডফোন সেবা প্রদান করে থাকে। এটির সেবা শহর অঞ্চল, উপশহর এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত। যদিও সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রে টেলিফোনের লাইসেন্স প্রদান করেছে তথাপি ল্যান্ডফোনের ক্ষেত্রে এটি এখনো একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে। এটি শুধু ল্যান্ড ফোনের সেবাই প্রদান করে থাকে তা নয়, এটি আমাদের ৬৪ জেলায় ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে ।

১৯৯৮ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা প্রদান করার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে “টেলিটক” নামের আলাদা একটি কোম্পানি খোলে যেটি বর্তমানে মোবাইল সেবা প্রদান করছে। টেলিটক হচ্ছে দেশের একমাত্র পাবলিক মোবাইল অপারেটর। ২০১২ সালে টেলিটক 3G প্রযুক্তি যুক্ত করে মোবাইল ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। এ প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকরা কথা বলার সাথে সাথে যার সাথে কথা বলছে তার ছবিও দেখতে পারছে। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানও দেখতে পাচ্ছে। আরো নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড প্রতিনিয়ত কাজ করছে। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (BRTC):

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) একটি রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা। এটি ১৯৬১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ সালের ৭নং সরকারি অধ্যাদেশ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর এটি বর্তমান নাম ধারন করে। বিআরটিসি যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের একটি আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটির গভর্ণিংবডির সদস্যদের মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রী, যোগাযোগ সচিব, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং অন্যান্য অফিসার যাদের দ্বারা সরকার কর্তৃক একজন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়।

বিআরটিসি যাত্রীসেবা এবং পণ্য পরিবহন সেবা দুটোই প্রদান করে। বিআরটিসি তিনটি আন্তর্জাতিক বাসরুট রয়েছে; এগুলো হচ্ছে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-শিলিগুড়ি। বাংলাদেশের মধ্যে এটি চট্টগ্রাম বগুড়া, কুমিল্লা, পাবনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা বাস ডিপো থেকে আন্তঃজেলা বাস সেবা দিয়ে থাকে । বর্তমানে ঢাকার যানযট নিরসনে বিআরটিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিনিয়ত বিআরটিসির বহরে নতুন নতুন বাস যোগ হচ্ছে। জানুয়ারি ২০১২ সাল পর্যন্ত বিআরটিসির মোট বাসের সংখ্যা ছিল ১১১৬টি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে আরো কিছু দোতালা বাস আমদানি করা হয়। বিআরটিসির সবচেয়ে আধুনিক সংযোজন হচ্ছে আর্টিকুলেটেড বা জোড়া বাস যেটি ২০১৩ সালে উদ্ভোধন করা হয়। বিভিন্ন উৎসব বা অনুষ্ঠানের সময় বিআরটিসি স্পেশাল সার্ভিস চালু করে; যেমন ঈদ স্পেশাল সার্ভিস।

বাস ছাড়াও পণ্য পরিবহনের সুবিধার জন্য বিআরটিসি ট্রাক সেবা প্রদান করে থাকে। বিআরটিসি সাধারণত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের খাদ্য, সার, কাগজ এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে । তাছাড়া বিভিন্ন দূর্যোগের সময় ত্রান পরিবহনে সহায়তা করে থাকে। বর্তমানে প্রায় ১৭১ টি ট্রাক বিআরটিসি বহরে রয়েছে।

বাস ও ট্রাক সেবা ছাড়াও বিআরটিসি চালকদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এটির প্রধান চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অবস্থিত গাজিপুরের জয়দেবপুর। এছাড়াও ঢাকা, চট্রগ্রাম, বগুড়া, খুলনা, ঝিনাইদাহেও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে। বিআরটিসির প্রধান ওয়ার্কশপ ঢাকার তেজগাঁও এ অবস্থিত।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা (Bangladesh Sugar and food Industry Corporation)

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা (BSFIC) একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয় পহেলা জুলাই ১৯৭৬ সালে । এটি ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ১৯৭২ এর ২৬ নং অর্ডারের ভিত্তিতে দুটি প্রতিষ্ঠান যথা বাংলাদেশ চিনিকল মিল কর্পোরেশন (BSMC) এবং বাংলাদেশ খাদ্য এবং সহায়ক শিল্প কর্পোরেশন (BFAIC) একিভূত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা খাদ্য মন্ত্রনালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। এটির সাধারণ প্রশাসনিক কার্যাবলি “বোর্ড অব ডিরেক্টরস” এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। “বোর্ড অব ডিরেক্টরস” এ থাকে একজন চেয়ারম্যান এবং ৫ জন পরিচালক যার মধ্যে থাকে একজন অর্থায়ন, একজন বিপণন, একজন উৎপাদন ও প্রকৌশলী, একজন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং একজন আখ উন্নয়ন ও গবেষণা।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Goal & Objective)

  • বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে উন্নতমানের চিনি উৎপাদন করা।
  • চিনিকলগুলোর সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে চিনির উৎপাদন বৃদ্ধি করে বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা করা । 
  • দক্ষ বিপণনের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখা।
  • চিনিতে আত্ম-নির্ভরশীলতা অর্জন করার লক্ষ্যে বর্তমান চিনিকলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং নতুন চিনিকল স্থাপন করা ।

বাংলাদেশ চিনি ও শিল্প সংস্থার অধীনে চিনিকল গুলো নিম্নরূপঃ

ক্রমিকপ্রতিষ্ঠানের নামঅবস্থান
পঞ্চগড় চিনিকল লি.পঞ্চগড়
খেতাবগঞ্জ চিনিকল লিখেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর
ঠাকুরগাঁ চিনিকল লি.ঠাকুরগাঁ
শ্যামপুর চিনিকল লি.শ্যামপুর, রংপুর
জয়পুরহাট চিনিকল লি.জয়পুরহাট
নাটোর চিনিকল লি.নাটোর
উত্তরবঙ্গ চিনিকল লি.গোপালপুর, নাটোর
রাজশাহী চিনিকল লি.রাজশাহী
কুষ্টিয়া চিনিকল লি.কুষ্টিয়া
১০মোবারকগঞ্জ চিনিকল লি.ঝিনাইদহ
১১কেরু এন্ড কোম্পানি লি.দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা
১২ফরিদপুর চিনিকল লি.মধুখালি, ফরিদপুর
১৩পাবনা চিনিকল লি.পাবনা
১৪ঝিল-বাংলা চিনিকল লি.দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর
১৫রংপুর চিনিকল লি.মহিমাগঞ্জ, গাইবান্ধা

ওয়াসা (Wasa-Water and Swearage Authority)

পানি সরবরাহ এবং নর্দমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত একটি আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে ।

বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (BCIC)

বাংলাদেশে রাসায়নিক শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ সাধনে BCIC অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৯৭২ সালে BCIC প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে সে সময় এটি (১) বাংলাদেশ সার, রসায়ন ও ভেষজ শিল্প সংস্থা (২) বাংলাদেশ কাগজ বোর্ড (৩) বাংলাদেশ টেনারিজ কর্পোরেশন এ তিনটি সংস্থায় বিভক্ত ছিল। পরবর্তীতে এ তিনটি সংস্থাকে একত্রিত করে BCIC প্রতিষ্ঠা করা হয়। BCIC বাংলাদেশের চামড়া শিল্প, কাগজ শিল্প, ভেষজ পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক সার প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা, মানোন্নয়ন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কার্যাবলি পালন করে থাকে । বর্তমানে এর অধীনে ৩০টি শিল্প ইউনিট রয়েছে। বিদেশের সাথেও এ সংস্থার সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীনে BCIC পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (BPC)

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। পর্যটন শিল্পের উন্নত প্রসার ও বিকাশে সরকার ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন গঠন করেছে। এ কর্পোরেশনের প্রধান লক্ষ্য ও কর্মসূচি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় স্থান সমূহ চিহ্নিত করা এবং প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার জন্য সেগুলোর সংস্কার, উন্নয়ন, সময়োপযোগী যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য পুস্তিকা, পোস্টার, স্পটসমূহের পরিচিতিমূলক হ্যান্ডবিল, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ইত্যাদি প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে থাকে। এসব কাজের জন্য ঢাকায় এর কেন্দ্রীয় দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হলেও কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, রংপুর, সিলেট বিভিন্ন স্থানে এর শাখা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পট গুলোতে অভিজাত হোটেল, রেস্তোরা ও ক্রীড়াকেন্দ্রও স্থাপিত হয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে। আমাদের দেশের প্রধান প্রধান পর্যটন স্পটগুলো হলো কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, জাফলং, রাঙামাটি, সিলেট, বাগেরহাট, কুমিল্লার ময়নামতি, দিনাজপুর।

ডাক যোগাযোগ (Postal Communication )

মানব সভ্যতার এক বিশেষ অবদান হচ্ছে ডাক ব্যবস্থা। প্রতিটি দেশেই ডাক ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে ডাক বিভাগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এর শাখা বাংলাদেশের গ্রামে- গঞ্জে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। বস্তুত বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তার প্রায় ৮০০০ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারনের অবিরাম সেবা করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার রাজধানীর সাথে সকল জেলা সদর এবং জেলা সদরের সাথে সকল থানা সদরে ডাক যোগাযোগ ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ জন্য ঢাকা থেকে সকল জেলা সদর ও জেলা সদর থেকে থানা সদরে সরাসরি মেইল ব্যাগ প্রবর্তনের মাধ্যমে নূন্যতম সময়ে ডাক আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

জনগণের কল্যাণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বেশকিছু সার্ভিস বা সেবা প্রদান করে: 

১. সাধারণ চিঠি: বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৩ টাকা ফি নিয়ে সাধারণ চিঠি বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের প্রাপকের নিকট পৌঁছে দেয়।
২.পার্সেল: পার্সেলের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট পরিমাপের পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো যায় । পার্সেল রেজিস্ট্রিকৃত এবং বিমা করা যায়। 

৩. মানি অর্ডার: মানি অর্ডারের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে যেকোনো স্থানে টাকা প্রেরণ করা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরিজীবিদের জন্য এটি খুবই সাহায্যকারী।
৪. পোস্টাল অর্ডার: অর্থ হস্তান্তরের জন্য ডাক বিভাগে পোস্টাল অর্ডার বিক্রয় এবং ভাঙানোর ব্যবস্থা রয়েছে ।
৫. টেলিগ্রাফ: ডাক বিভাগের পুরাতন একটি সেবা হচ্ছে টেলিগ্রাফ। বর্তমানে অবশ্য টেলিগ্রাফ ব্যবহার কম হয়ে থাকে ।
৬. ডাকঘর সঞ্চয়পত্রঃ ডাক ঘর সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিত্তিতে জমা রেখে সুদ প্রদান করে।
৭. স্ট্যাম্প: জমি, ফ্ল্যাট, দোকান ক্রয়-বিক্রয়, চুক্তি ইত্যাদি কাজে দলিল লিখনে স্ট্যাম্প ব্যবহৃত হয়, ডাক বিভাগ এটি বিক্রয় করে থাকে ।
৮. প্রাইজবন্ড ক্রয়-বিক্রয়: বিভিন্ন উপহার এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তে ড্র-এর মাধ্যমে জনসাধারণকে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য ডাক বিভাগে প্রাইজবন্ড ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা আছে ।

বাংলাদেশ রেলওয়ে (BR)

বাংলাদেশের রেলপথের পরিমাণ অল্প হলেও তা এদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রেলপথ দেশের প্রধার শহর, বন্দর, বাণিজ্য ও শিল্প কেন্দ্রের সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংযোগ রক্ষা করে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাস অত্যন্ত পূরাতন। এটির যাত্রা শুরু হয় ১৫ই নভেম্বর ১৮৬২ সালে। রেলওয়ে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ের অধীন। আর ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন মহাপরিচালক । বাংলাদেশে বর্তমানে তিন ধরনের রেলপথ চালু আছে। পথগুলো হচ্ছে-মিটারগেজ রেলপথ, ব্রডগেজ রেলপথ ও ডুয়েলগেজ রেলপথ। যমুনা নদীর পূর্বাংশে মিটারগেজ ও ডুয়েলগেজ এবং পশ্চিমাংশে ব্রডগেজ রেলপথ চালু আছে। যমুনা সেতু চালুর পূর্বে রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৭৬৮ কি.মি. । বর্তমানে রেলপথের দৈর্ঘ্য ২৮৫৫ কি.মি. এবং প্রায় ৩৪,১৬৮ জন কর্মরত আছে। এর মধ্যে ৬৬০ কি.মি. ব্রডগেজ (বেশিরভাগ পশ্চিমাঞ্চল), ১৮৩০ কি.মি. মিটারগেজ (বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় এবং পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত) এবং ৩৬৫ কি.মি. ডুয়েল গেজ। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর পূর্বে বিচ্ছিন্ন পূর্ব-পশ্চিম অঞ্চলের সাথে যুক্ত হয় ।

উন্নত সেবা প্রদান করার জন্য রেলপথকে দুটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে-পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিম অঞ্চল। দুটি অঞ্চলে দুজন ব্যবস্থাপক থাকেন যিনি মহাপরিচালকের নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। প্রত্যেক অঞ্চলে দুটি ওয়ার্কসপ আছে; একটি পাহাড়তলী এবং অন্যটি সৈয়দপুরে অবস্থিত। রেলওয়ের নিজস্ব প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সাটল ট্রেন সেবা থেকে শুরু করে যাত্রী সেবা এবং পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে। এত সেবা প্রদান করার পরেও রেল এখনো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হতে পারে নাই। এখনো সরকারকে এ খাতে ভর্তুকী দিতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের রেলপথ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সমস্যাগুলো হলো; ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা, ত্রুটিপূর্ণ সংকেত পদ্ধতি, ইঞ্জিন ও বগির অপ্রতুলতা, ইঞ্জিন ড্রাইভার সংকট, ওয়াগন স্বল্পতা, দুর্ঘটনা, রেলওয়ে স্লিপার, রেলওয়ে পাথরের অপর্যাপ্ততা, দুর্নীতি ইত্যাদি।

তবে আশার কথা বর্তমানে সরকার এ খাতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। কিছু কিছু রেলপথ যেগুলো বন্ধ ছিল তা সংস্কারের ব্যবস্থা করেছে। নতুন লাইন স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি ভারত থেকে নতুন কোচ আমদানি করেছে এবং জাইকার সাথে মেট্রো রেলের চুক্তি হয়েছে। এগুলো সম্পাদিত হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে তার সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করতে পারবে।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

Promotion